Contributors

Friday, May 15, 2020

রূপোলীপর্দার বহুরূপী

একই অঙ্গে চরিত্রের বাহার


ছবি দেখে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন কি বিষয় নিয়ে লিখতে চলেছি| হ্যান,  ঠিক ধরেছেন| একদিকে যেমন দেশ জুড়ে lockdown, অন্যদিকে এই lockdown এর হাত ধরে সবার জীবনে- ফিরে এসেছে  'HOBBY' নামক শব্দটি| তাই এই শব্দটিকে আমার জীবনেও যথাযত  মর্যাদা দিতে, আমি বেছে নিলাম সিনেমা দেখা যা প্রধানতই আধুনিক বাংলাছবি|

ছেলেটিকে প্রথম চিনেছিলাম 'জী বাংলা রিয়ালিটি শো "অপুর  সংসার" এর প্রধান সদস্য অপু-এর বড়ভাই তপু রূপে| আকর্ষণ করেছিল তপু -এর সাবলীল বচনশক্তি এবং কণ্ঠের দৃঢ়তা| সৌম্যদর্শন সেই তরুণকে বড়পর্দায় প্রথম দেখলাম "ঈগলের চোখ "-| চরিত্রটিকে মন্দ লাগেনি তবে সেই ছবি ছিল আমার প্রিয় সাহিত্যকের রচনার অবলম্বনে নির্মিত, যদিও কাহিনীর মূল আকর্ষণ কেন্দ্র ছিল গোয়েন্দা শবর দাসগুপ্ত ( স্পেশাল ব্রাঞ্চ, লাল বাজার )| তবে সে অনেক বছর আগের কথা , তখন নভেল করোনা ভাইরাকে আমরা চিনিতাম না| জানতাম না তার এই পৃথিবীব্যাপি বিধ্বংসী মারণক্ষমতার কথা| অসীম শক্তিতে বলীয়ান, এই ক্ষুদ্র অণুজীবের ভয়ে  আজ আমরা ঘরবন্দি অথচ তার সৌজন্যে আমরা পেয়েছি বেশ অনেকটা সময়, যা শুধুই নিজের সময়| বাড়িতে থেকে কম্পিউটারের মাধম্যে  কর্মযজ্ঞে সামিল হয়ে সত্ত্বেও কেউ কবিতা লিখছেন, কেই বা ছবি আঁকছেন , আবার কেউ গান-নাচের ছন্দে ফিরিয়ে আনছেন শৈশবকে| এতকিছুর মধ্যে আমি সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট হলাম|দেখে ফেললাম একের পর এক সিনেমা| তার মধ্যে খুঁজে পেলাম এই মানুষটির সৃষ্ট কিছু বিচিএ  চরিএ কে|

কখনো সে নেতাজির আদর্শে বিশ্বাসী গবেষক চন্দ্রচূড় ধর, যিনি পাল্টে দিতে পারেন পরিচিত বিতর্কিত ইতিহাসকে তার বুধ্ধিমত্তা প্রখর গবেষণাপূর্ণ যুক্তি দিয়ে| কখনো সে আবার পাগল প্রেমিক ডাকাত বুলেট সিং ওরফে গোনশা মাইতি যা দর্শকে দিয়েছে অনাবিল হাস্যরসের ভান্ডার| আবার কোথাও নাকি নামি দারোগা যে কিনা অন্যায়ের প্রতিবাদ- দোষীর "কানের গোড়ায় চর " বসাতে দুবার পর্যন্ত ভাবেন না|

প্রতিটি চরিত্র ভিত্তিক অভিনয় বেশ ভালোই লাগছিলো কিন্তু যেই জন্য এতো দিন পরে লিখতে বসেছি তার অন্যতম কারণ হলো এই ভদ্রলোকটির সৃষ্ট নতুন বেশ কিছু চরিত্র, যাকে ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা সত্যি আমার কলমের নেই| বার্থ প্রেমিক অর্ণব সরকার যখন দেখছিলো তার প্রাণের সাথী, কমলিনীর রক্ত মাখা মৃত শরীর পরে আছে গাড়ির ছাদে, সে বিভ্রান্ত ও বিচলিত হয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো অজানা ভবিষ্যতের দিকে| প্রিয় মানুষকে হারানোর ব্যাথা সত্যই  কত তীব্র তা অর্ণবকে দেখে দর্শক অনুভব করেছিল| এবার এলো নতুন রোমহর্ষক চরিত্র, চায়না টাউন এর গ্যাং-লিডার " খোকা "| যে ভয় পায়ে না মানুষ মারতে, অথচ  সেই রক্তেস্নাত খোকার মন কিন্তু  শৈশবপ্রেমে  বিভোর| মানব-প্রেম ও মানব-নাসের এক অসামান্য মিশ্রণ এই খোকা রয়ে যাবে বাঙালির মনে| চিলিফিশ আর চিকেন চাউমিন কি বাঙালি পারবে খেতে? এবার সেই খোকাই এলো নতুন রূপে বাংলার ইতিহাসের পুনরুত্থানের কাজে| শেষ করে ফেললো লাইব্রেরি এর বইয়ের সারি| আজ সে ঐতিহাসিক গবেষক সোহম| খুঁজে বার করলো বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের তরবারি| তুলে ধরলো একের পরে এক পুরোনো কলকাতার ইতিহাস ,যা আমার মতো ইতিহাস প্রেমীদের সমৃদ্ধ করেছে|

সবার শেষে আসি নিখিলেশ চৌধুরীর কাছে| খোকা এখন প্রৌঢ়| মাথার পক্ককেশ পত্র -সম্পাদক-এর  চরিত্রকে আরো অভিজ্ঞ এবং গুরুতর করে তুলেছে| কি অপূর্ব তার জ্ঞান, ভালোবাসতে জানেন গরিব অসহায় মানুষকে| ভালোবাসেন বাল্যবন্ধুকে, তিনিই পারেন দলিত সম্প্রদায়ের মেয়েকে ভালোবেসে নিজ সহধর্মিনীর মর্যাদা দিতে| জাতি ধর্মের ব্যাড়াজাল ভেঙে সম্মান করেন সব মানুষকে যা আজকের দিনে দুষ্প্রাপ্য|

যাই হোক , মানুষটির নাম শ্রী অনির্বান ভট্টাচার্য| তার সৃষ্ট প্রতিটা চরিত্র স্পষ্ট এবং একে অন্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা |সেই চরিত্ররা অনায়াসেই বাঙালি দর্শকে আজ উপস্থিত করে রুপোলি পর্দার সম্মুখে|| আজ সত্যি বাংলা সিনেমা অনেক সমৃদ্ধ, অনেক মার্জিত এক ত্রূটিহীন অলংকার|

ভালো থাকবেন Sir| আমরা, বাঙালি দর্শকমন্ডলী  আজও  অধীর আগ্রহে অপেখ্যা করি আপনাদের সৃষ্ট নতুন ফসল আস্বাদনের আশায়|


No comments:

Post a Comment